ঢাকা ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, জেনেভার শ্রম কাউন্সেলরকে প্রত্যাহার ১৮৪ কোটি টাকা পাচার: বিএনপি নেতা ফালুসহ তিনজনকে অব্যাহতি সাবেক অতিরিক্ত সচিবের বাসায় যৌথবাহিনীর অভিযানে যা মিলল ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৬৬ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপি: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোষ্টগার্ডের অভিযানে দেশীয় অস্ত্র,বাহিনীর পোষাক ও মাদকসহ আটক-২ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা আওয়ামীলীগের রাষ্ট্রপতি ইস্যু সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল ১‌ জনে হবে না, ৪ জন লাগবে : শ্রীলেখা মিত্র আপনার যেসব বদঅভ্যাসের কারণেই কমে যাচ্ছে স.হ.বা.সের চাহিদা

আসুন নতুন বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করি, ব্যবসায়ীদের প্রতি ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭৬৮৪ বার পড়া হয়েছে

ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারের সাথে একজোট হয়ে কাজ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা ব্যবহার করে আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, এ লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।”তিনি বলেন, “এটা কোনও কল্পকাহিনী না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আপনার মনস্থির করে এগিয়ে এলে খুব দ্রুত গতিতে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। 

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।

সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করলে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা অবশ্যম্ভাবী- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশিদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনারা সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন।”

ড. ইউনূস বলেন, “এ সুযোগ আর কখনও আসবে কি না জানি না। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পারিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে। দুনিয়ায় এমন কোনও দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়তো কেউ সরকারে আছেন, কেউবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আাছে। পারস্পারিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।”

তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “যে কয়টা দিন সরকারে থাকি- আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের অঙ্গীকার হলো- নতুন বাংলাদেশের জন্য যা আছে তা করবো। যেন বলে যেতে পারি- এই দেশ আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।”

স্বৈরাচার হঠাতে ছাত্রদের এবারের আন্দোলন কোনও প্রথাগত আন্দোলন ছিল না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, “এটা সাধারণ কোনও আন্দোলন ছিল না। যারা শহিদ হয়েছেন, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অনেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছেন। তারা মনস্থির করেছিল যে উদ্দেশে রাস্তায় নেমেছে- সে উদ্দেশে প্রাণ দিতে তারা তৈরি আছে। রাস্তায় নেমেছে তাতে প্রাণ গেলে যাবে, কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সে লক্ষ্য অর্জন করবেই করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণরা প্রাণ দিয়েছে। যে বাংলাদেশে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা তা অসহ্য হয়ে উঠেছিল। এ কারণে যখন ছাত্রদের প্রাণ ঝরছিল- তখন সারাদেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনও মানুষ ছিল না তাদের সমর্থন করেনি। তাদের প্রাণের ফলে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেয়েছি।”

তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে যে পচন ধরেছিল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছাড়া সেই পচন থেকে মুক্তির কোনও উপায় ছিল না। ছাত্রদের আন্দোলন হঠাৎ করে সেই অবস্থা বদলে দিয়েছে। আর কোনও পচন নয়, আমরা সুস্থ, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।”

ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনসূ বলেন, “সংস্কার কেবল সরকারের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আসুন সবাই মিলে সংস্কার করি। যেখানে ভুল দেখবেন, আত্ম-জিজ্ঞাসা করবেন-সেখান থেকে বেরিয়ে আসার। ছেলেদের আত্মাহুতির দিকে তাকিয়ে ভুলপথ পরিহার করুন।”

শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সরকার সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মেয়াদকালে আমরা শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা এখনও জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। আমাদেরকে সাহস দিন, এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করি।”

তিনি শ্রমিকদের যা প্রাপ্য, মালিকদের তাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, “ব্যবসায় বাধার কোনও সীমা নেই। ব্যবসা করা এক মহা সংগ্রাম। তবে আমরা এসব বাধা পেরিয়ে যেতে আজ একযোগে সরকার, সরকারের বাইরে সবাই এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাবো।”

তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হলে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হারাবে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।”

দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।”

সংলাপে অর্থ উপদেষ্টা ড, সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বক্তব্য রাখেন। সূত্র: বাসস

নিউজটি শেয়ার করুন

আসুন নতুন বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করি, ব্যবসায়ীদের প্রতি ড. ইউনূস

আপডেট সময় : ০৪:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারের সাথে একজোট হয়ে কাজ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা ব্যবহার করে আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, এ লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।”তিনি বলেন, “এটা কোনও কল্পকাহিনী না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আপনার মনস্থির করে এগিয়ে এলে খুব দ্রুত গতিতে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। 

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।

সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করলে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা অবশ্যম্ভাবী- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশিদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনারা সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন।”

ড. ইউনূস বলেন, “এ সুযোগ আর কখনও আসবে কি না জানি না। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পারিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে। দুনিয়ায় এমন কোনও দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়তো কেউ সরকারে আছেন, কেউবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আাছে। পারস্পারিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।”

তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “যে কয়টা দিন সরকারে থাকি- আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের অঙ্গীকার হলো- নতুন বাংলাদেশের জন্য যা আছে তা করবো। যেন বলে যেতে পারি- এই দেশ আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।”

স্বৈরাচার হঠাতে ছাত্রদের এবারের আন্দোলন কোনও প্রথাগত আন্দোলন ছিল না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, “এটা সাধারণ কোনও আন্দোলন ছিল না। যারা শহিদ হয়েছেন, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অনেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছেন। তারা মনস্থির করেছিল যে উদ্দেশে রাস্তায় নেমেছে- সে উদ্দেশে প্রাণ দিতে তারা তৈরি আছে। রাস্তায় নেমেছে তাতে প্রাণ গেলে যাবে, কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সে লক্ষ্য অর্জন করবেই করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণরা প্রাণ দিয়েছে। যে বাংলাদেশে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা তা অসহ্য হয়ে উঠেছিল। এ কারণে যখন ছাত্রদের প্রাণ ঝরছিল- তখন সারাদেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনও মানুষ ছিল না তাদের সমর্থন করেনি। তাদের প্রাণের ফলে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেয়েছি।”

তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে যে পচন ধরেছিল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছাড়া সেই পচন থেকে মুক্তির কোনও উপায় ছিল না। ছাত্রদের আন্দোলন হঠাৎ করে সেই অবস্থা বদলে দিয়েছে। আর কোনও পচন নয়, আমরা সুস্থ, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।”

ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনসূ বলেন, “সংস্কার কেবল সরকারের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আসুন সবাই মিলে সংস্কার করি। যেখানে ভুল দেখবেন, আত্ম-জিজ্ঞাসা করবেন-সেখান থেকে বেরিয়ে আসার। ছেলেদের আত্মাহুতির দিকে তাকিয়ে ভুলপথ পরিহার করুন।”

শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সরকার সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মেয়াদকালে আমরা শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা এখনও জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। আমাদেরকে সাহস দিন, এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করি।”

তিনি শ্রমিকদের যা প্রাপ্য, মালিকদের তাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, “ব্যবসায় বাধার কোনও সীমা নেই। ব্যবসা করা এক মহা সংগ্রাম। তবে আমরা এসব বাধা পেরিয়ে যেতে আজ একযোগে সরকার, সরকারের বাইরে সবাই এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাবো।”

তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হলে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হারাবে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।”

দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।”

সংলাপে অর্থ উপদেষ্টা ড, সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বক্তব্য রাখেন। সূত্র: বাসস